۶ آذر ۱۴۰۳ |۲۴ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 26, 2024
হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা মাসুম আলী গাজী
হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা মাসুম আলী গাজী

হাওজা / আমাদের এটা বুঝতে হবে যে, সৃষ্টির সম্মান আসলেই তার স্রষ্টার সম্মান এবং সৃষ্টির ভালবাসা আসলেই তার সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, মাননীয় অধ্যাপক সাহেব, আপনার কতজন সন্তান আছে?

আমি বললাম, "তিন।"

তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন,

"তাদের বয়স কত?"

আমি উত্তর দিলাম,

"নয় বছর, সাত বছর এবং তিন বছর।"

এ কথা শুনে তিনি বললেন, "তাহলে আপনি নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার সময় তাদের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসেন?"

আমি বললাম,

অবশ্যই।

তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন :

তাহলে উক্ত জিনিসগুলো তাদের মধ্যে আপনি কিভাবে বন্টন করেন?

আমি বললাম,

"আমার একটি ছেলে এবং দুইটি মেয়ে আছে। আর যেহেতু ছেলেটি বড়, তাই আমি যা কিছু আনি তা তার হস্তান্তর করি এবং তাকে বলি, সেগুলি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে।"

এটা শুনে তিনি বললেন, "প্রফেসর সাহেব! একদিন যদি আপনি জানতে পারেন যে, আপনার ছেলে আপনার নির্দেশ অনুযায়ী আপনার আনা জিনিসগুলি সঠিক ভাবে বিতরণ করে না বা বিতরণে ন্যায়বিচার করে না তাহলে আপনি কি করবেন?"

আমি হেসে বললাম,

"যদি কখনও এমনটা হয় তবে এর সমাধান খুবই সহজ। পরের বার আমি তাকে শুধু তার ভাগটাই দেব এবং মেয়েদের ভাগ আলাদা করে দেব।"

এটা শুনে তার মুখে একটি অর্থপূর্ণ হাসি ফুটে উঠল এবং সে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,

“অধ্যাপক সাহেব! আপনার এই কথার মধ্যে ওই কথা লুকিয়ে আছে, যার ভিত্তিতে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর উপহার বিতরণের ফর্মুলা নির্ধারণ করেছেন।

আল্লাহ্t সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আপনাকে যে রিজিক ও বরকত দান করেছেন তা কেবল আপনার একার জন্য নয়। অনেকেরই তার মধ্যে অংশ আছে এবং যতক্ষণ আপনি সেই অংশটি তাদের কাছে সম্পূর্ণ সততা এবং ন্যায়বিচারের সাথে পৌঁছতে থাকেন আপনার কাছে সেই অনুপাতে অংশ পৌঁছে যায়। সেই অনুপাতে বিশ্বের দৃষ্টিতে আপনি ধনী 'শেঠ' এবং পুঁজিপতি হয়ে থাকেন। কিন্তু যখন এই বন্টনে অবহেলা বা অসদাচরণ করেন, তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আপনাকে শুধুমাত্র আপনার অংশে সীমাবদ্ধ রাখেন এবং আপনাকে ওই অগণিত প্রদান থেকে বঞ্চিত করেন।

তারপর সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা সেই রিজিক সরাসরি তাদের কাছে পৌঁছে দিতে শুরু করেন অথবা ওই রিজিক বিতরণের জন্য একটি নতুন "পরিবেশক" নিয়োগ করেন এবং বিশ্ববাসী মনে করেন যে, এই শেঠ দেউলিয়া হয়ে গেছে।

একই সাথে একথা শোনা যায় যে, অমুকের পুত্রের প্রতি আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু। তিনি দিবারাত্রে উন্নতি করছেন, সে খুবই তাড়াতাড়ি কোটিপতি হয়ে গেছে। এটা ওই ব্যক্তি যাকে প্রতিপালক আপনাকে অপসারণ করে আপনার জায়গায় নতুন "পরিবেশক" হিসেবে নিয়োগ করেছেন।

এটা লক্ষ্য করা উচিত যে, আল্লাহর বণ্টনের এই বিষয়টি কেবলমাত্র রিজিকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর মধ্যে রয়েছে মর্যাদা, শান্তি, প্রশান্তি এবং আরামও। বিশেষ করে সম্মানের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর খুব ভালোভাবে এটা বুঝতে হবে যে, মহান আল্লাহ তাআলা সম্মানের ব্যাপারে অত্যন্ত সংবেদনশীল। আমরা আল্লাহ প্রদত্ত সম্মানকে আমাদের ব্যক্তিগত উপার্জন হিসাবে বিবেচনা করি। আমরা এটা ধারণা করি যে, আমরা অন্যের অংশগ্রহণ ছাড়াই এই সম্মানের মালিক। এ সবই আমার ব্যক্তিগত ঐতিহ্য এবং আমার যোগ্যতা ও প্রতিভার ফসল কিন্তু নিশ্চিতভাবে এটা ঠিক নয়।

আপনি যদি আপনার চারপাশে তাকান তবে আপনি অস্থিরতা এবং উদ্বেগের মধ্যে অবস্থিত মানুষের ভিড় দেখতে পাবেন। দুর্ভাগ্যক্রমে, জাতিগত হিসাবে আমরাও একই অবস্থার শিকার। এটা কেন? বাকি বিশ্বের তুলনায় আমরা কেন এত বঞ্চিত? এটা কি আমাদের অপকর্ম এবং পাপের ফল নাকি অন্য কিছু?

আমরা প্রতিপালকের প্রদত্ত সম্মান থেকে মানুষের অংশ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি এবং এইভাবে সম্মান হ্রাস পেয়েছে। আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রদত্ত সুযোগ -সুবিধা ভাগ করা বন্ধ করে দিয়েছি, যার ফলে তিনি সুবিধাগুলো আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছেন।

আমরা আমাদের দরিদ্র প্রতিবেশীর অপরাধী, ওই দরিদ্র মেয়ের অপরাধী, যার বিয়ের খরচ আমাদের সন্তানের বার্ষিক পকেট টাকার সমান। আমরা ওই তিরস্কার ও বিদ্রুপে বরাবর অংশীদার, জীবনভর যারা কম যৌতুক আনতে সহ্য করে। আমরা এই অসুস্থ শিশুটির অপরাধী, যার চিকিৎসার খরচ আমাদের বাড়িতে পার্ক করা অনেক গাড়ির মধ্যে একটির মূল্য। আমরা সেই আবেদনকারীর অপরাধী, যিনি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ভুল সময়ে ঋণের জন্য আমাদের অফিসে আসে যখন আমরা প্রিয়জন বা বন্ধুর সাথে গসিপে ব্যস্ত থাকি এবং এটি পরের দিনের জন্য স্থগিত করে রাখি। আমরা ওই গৃহপরিচারিকার অপরাধী, যার ছেলে আমাদের বাড়িতে থাকা ভাঙা সাইকেল, পুরনো কাপড় এবং জুতা খুবই আক্ষেপের চোখে দেখে, যা না আমরা ব্যবহার করি আর না কাউকে দিতে সাহস পাই।

এই সম্মিলিত অশান্তি, অস্থিরতা, অসুখী এবং প্রকোপ থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হল,

"আমাদের প্রতিদিনের আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। "

আমাদের এটা বুঝতে হবে যে, সৃষ্টির সম্মান আসলেই তার স্রষ্টার সম্মান এবং সৃষ্টির ভালবাসা আসলেই তার সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা। আমরা কি সেই সব জাতির সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারি, যেখানে মানুষ তো মানুষ বরং পশুরাও তাদের সম্মান, ভালবাসা এবং সুযোগ -সুবিধা সম্পূর্ণ সততা এবং উদারতার সাথে অর্জন করে।  যখন আমরা ভালোবাসার জায়গায় ঘৃণা, সম্মানের জায়গায় অবজ্ঞা এবং বকশিশের জায়গায় বঞ্চনার ব্যবসা করব, তাহলে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে, সমগ্র পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে তাড়াতাড়ি বা পরবর্তীতে অপসারণ করে নতুন "পরিবেশক" নিয়োগ করবেন।

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ ওয়া আ'লে মুহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ওয়াহ শুরনা মাআহুম ওয়াল আন আদুওয়াহুম।

লেখা: হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা মাসুম আলী গাজী (নাজাফ ইরাক)

تبصرہ ارسال

You are replying to: .